নরসিংদী হানাদার মুক্ত দিবসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভাস্কর্য নির্মাণ, বিজয় র‌্যালী ও আলোচনা সভা

নিজস্ব প্রতিবেদক

 

নরসিংদী হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে ভাস্কর্য নির্মান, বিজয় র‌্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার জেলা সার্কিট হাউজের সামনে জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন ‘যূথবদ্ধ: সংগ্রামে-শান্তিতে-সৃষ্টিতে’ নামের মুক্তিযুদ্ধের একটি ভাস্কর্য উদ্বোধন করেন। পরে সেখান থেকে বিজয় র‌্যালি বের করে শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলার কয়েকশ মুক্তিযোদ্ধার পাশাপাশি বিভিন্ন পেশা শ্রেণীর সুশীল ব্যক্তিবর্গ ও সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অংশ নেন।


এসময় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আবদুল মতিন ভূইয়া, পুলিশ সুপার মো. মিরাজ উদ্দিন আহমেদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল মোতালিব পাঠান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, আবদুল আউয়াল অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট সুষমা সুলতানা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জেলা মুক্তিযুদ্ধ সংসদের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস নরসিংদী জেলার বিভিন্ন স্থানে শতাধিক খন্ড যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ওই যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মমতার শিকার হয়ে শহীদ হন ১১৬ জন বীর সন্তান। এরমধ্যে নরসিংদী সদরের ২৭, মনোহরদীর ১২, পলাশে ১১, শিবপুরের ১৩, রায়পুরায় ৩৭ ও বেলাব উপজেলার ১৬ জন।

জেলার কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৮ ডিসেম্বর নরসিংদী সদর ব্যতীত জেলার সব এলাকা সম্পূর্ণভাবে মুক্ত এলাকায় পরিনত হয়। পাক বাহিনী নরসিংদী শহরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ১১ ডিসেম্বর শিবপুরের মজনু মৃধার নেতৃত্বে নরসিংদী শহরের টেলিফোন এক্সচেঞ্জটি প্রথমে উড়িয়ে দেওয়া হয়। এরইমধ্যে খবর আসে আখাউড়া, ভৈরবের যুদ্ধ শেষ করে ভারতের মিত্রবাহিনীর সদস্য সামনে দিকে এগিয়ে আসছে। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বেড়ে যায়। তার পর দিন অর্থাৎ ১২ ডিসেম্বর সকালে সংগঠিত হয় নরসিংদীর মুক্তিযোদ্ধের শেষ যুদ্ধ। ওই দিন সকাল ৯টার দিকে পাক সেনাদের একটি দল অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পাঁচদোনা থেকে বহ্মপুত্র নদীর পাড় ধরে জিনারদী রেলষ্টেশনের দিকে এগোচ্ছে। তখন ইউনিট কমান্ডার সিরাজ উদ্দিনের (ন্যাভাল সিরাজ) নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের এক দল পলাশের জিনারদী পাটুয়া এলাকায় পজিসন নেয়। সকাল ১০ টার দিকে পাক বাহিনীর ২১ জনের একটি পাটুয়া এলাকার আসতেই চালানো হয় গুলি। ঘন্টা ব্যাপী যুদ্ধ শেষে ২১ জন পাক সেনা আত্মসমর্পন করে। সেখানে পাক বাহিনীর দুজন গুলিবিদ্ধ হয়। এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে নরসিংদী শত্রু মুক্ত হয়। পরে সিরাজ উদ্দিন, ইমাম হোসেনের নেতৃত্বে নরসিংদীতে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে পাঁচদোনা এলাকায় বিজয় মিছিল বের হয়। এই মিছিলের খবর পেয়ে মনির, মান্নান, মোতালিব পাঠানের নেতৃত্বে শেখেরচর মাধবদী এলাকায়ও বিজয় মিছিল বের করা হয়।


নরসিংদীর জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের গৌরব্বোজ্জ্বল ইতিহাস নতুন প্রজন্মেও সামনে তুলে ধরার প্রয়াসেই যূথবদ্ধ- সংগ্রামে-শান্তিতে- সৃষ্টিতে ভাস্কর্যটি নির্মান করা হয়েছে। এই ভাস্কর্যের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথাও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।’

The post নরসিংদী হানাদার মুক্ত দিবসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভাস্কর্য নির্মাণ, বিজয় র‌্যালী ও আলোচনা সভা appeared first on Narsingdi Times.



from Search Results for “মনোহরদী ” – Narsingdi Times https://ift.tt/2LbdYMI
via IFTTT